জঙ্গলমহলে পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা: কাজের খোঁজে মৃত্যু, সুরক্ষা নেই!

পুরুলিয়ার হেরবোনা গ্রামের ২৩ বছর বয়সী যুবক নরেশ ওরাং একটি স্বপ্ন নিয়ে ঘর ছেড়েছিলেন—পরিবারকে একটু ভালো রাখবেন। কিন্তু অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমে গিয়ে সেই স্বপ্ন চিরতরে থেমে গেল। মাত্র দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে কর্মস্থলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ হারালেন তিনি।

এই একটিমাত্র ঘটনা নয়। এটি এক ভয়াবহ বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি, যা এখন জঙ্গলমহলের প্রায় প্রতিটি পরিবারকেই স্পর্শ করছে।

জঙ্গলমহলের বিভিন্ন জেলা—পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুর—দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত। এখানকার যুবসমাজ শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত, স্থানীয়ভাবে কাজের অভাব, শিল্প-সংস্থানের অভাব এবং কৃষিতে আয় অনিশ্চিত। ফলে হাজার হাজার তরুণ বাধ্য হচ্ছেন ভিন্ রাজ্যে পাড়ি দিতে—কখনও মহারাষ্ট্র, কখনও তেলেঙ্গানা, আবার কখনও অন্ধ্রপ্রদেশে।

জঙ্গলমহলে পরিযায়ী শ্রমিক বাড়ছে কেন?

পরিবারের পেটে ভাত তুলে দিতে তারা ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য হন। কোনো চুক্তি নেই, কোনো সুরক্ষা নেই, নেই বীমা বা স্বাস্থ্যসেবা। ফলে, নরেশ ওরাংয়ের মতো মৃত্যুর ঘটনা এখন আর নতুন নয়, শুধু প্রতিবেদন হয় না।

নরেশের মৃত্যুর দায় কে নেবে?

নরেশের অকাল মৃত্যুতে স্ত্রী ও কন্যা আজ দিশেহারা। তার পরিবারের মতো আরও অনেক পরিবার অন্ধকারে ডুবে রয়েছে। এই ঘটনায় ছোটোনাগপুর ভয়েস রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এবং তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি জানাচ্ছে।

. মানবিক ভিত্তিতে আর্থিক সহায়তা
২. পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য বিদ্যমান সরকারি প্রকল্পে অন্তর্ভুক্তি
৩. নরেশের কন্যার শিক্ষা ও ভবিষ্যতের নিরাপত্তা

আমাদের প্রশ্ন: কেন এই পরিস্থিতি বদলাচ্ছে না?

পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য কেন কোনো সুনির্দিষ্ট সরকারি নীতি নেই?

কেন তাদের কাজের জায়গায় নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই?

কেন তাদের মৃত্যু হলে কোম্পানিগুলো দায় এড়িয়ে যায়?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে হবে, যদি আমরা সত্যিই চাই জঙ্গলমহলের ছেলে-মেয়েরা নিজেদের মাটিতে মাথা উঁচু করে বাঁচুক।



পরিযায়ী শ্রমিকের জীবন যেন মৃত্যুর চুক্তিপত্র না হয়। এই অঞ্চলের যুবকদের জীবন-জীবিকা নিশ্চিত করতে হলে সরকারকে অবিলম্বে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। নাহলে “জীবিকার জন্য মৃত্যু”—এই ট্র্যাজেডি আমাদের সমাজের স্বাভাবিক চিত্র হয়ে দাঁড়াবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *