✍️সহদেব মাহাত
একসময় এই মাটি ছিলো নিষিদ্ধ স্বর্গ,
আর্যের পদধ্বনি ঢুকতে পারেনি এই গহনে।
ঝরনার শব্দে জন্ম নিত গান,
ঢোল ধমসার তালে পাহাড়ের ঢালে গর্জে উঠতো উৎসব।
মাতৃভাষা ছিলো সকালবেলার সূর্যের মতো উজ্জ্বল,
অরণ্যের গন্ধ ছিলো নিঃশ্বাসের মতো স্বাভাবিক।
তারপর, এল বহিরাগতদের দল
পাইকারের চোখে লোভ, উদ্বাস্তুদের চোখে তৃষ্ণা—
ছোটনাগপুর হলো তাদের নতুন মানচিত্র।
জল, জমি, জঙ্গল—
সবকিছুর ওপর করাল হাতের ছাপ।
হাজারে হাজারে মানুষ পা ফেলল এই অরণ্যে,
মাটির সন্তান পিছু হটতে লাগলো
নিজেরই জন্মভূমির ভিতর থেকে।
এখানে আর ঢোল ধমসার তালে পাহাড় কেঁপে ওঠে না,
শুধু শোনা যায় ডাম্পারের গর্জন,
খনি খুঁড়ে তোলা পাথরের আর্তনাদ।
মাতৃভাষা পড়ে আছে রোদে শুকনো মৃতদেহের মতো,
যাকে আর কেউ নিজের মনে করে না।
জলের দরে জমি,
বিক্রি হচ্ছে গাছের ছায়া, নদীর পাড়, শিকড়ের স্মৃতি।
ভূমিপুত্ররা ক্রমে হয়ে যাচ্ছে নাম-হারা ভিখারি,
নিজেরই মাটিতে অচেনা, অবাঞ্ছিত, পরবাসী।
ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম—সব ছিঁড়ে ছুঁড়ে নেওয়া হচ্ছে শকুনের নখে ধরা মৃতদেহের মতো।
পরিযায়ী ঝাঁকে ঝাঁকে নেমে পড়েছে এই ভূমিতে,
লুটে নিচ্ছে কাঠ, বালি, পাথর,
নদীর বুকে ফেলে দিচ্ছে শূন্যতার গর্ত,
পাহাড়ের শরীর কেটে নিচ্ছে অশ্লীল দাগের মতো।
আমার মাতৃভূমি—
যাকে আমি একদিন বলতাম অরণ্যের মা,
আজ সে ধর্ষিতা।
তার চোখে নেই কোনো অশ্রু,
তার ছেঁড়া আঁচল, তার লুণ্ঠিত শরীর,
তার চুরি হয়েছে ফুসফুস।
শুধু,দুচোখে নীরব কান্না।
০৫/০৮/২০২৫