কুড়মালি নেগ-নীতি-নেগাচার – রহইন পরব

  • সৃস্টিধর মাহাত(বঁশরিআর)

কুড়মালি নেগাচারে রোহিন দিনটি অতীব পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ দিন। ধরণ (জ্যৈষ্ঠ) মাসের ১৩ দিনে রোহিন। ১২ দিনে বারনি অর্থাৎ প্রস্তুতির দিন। রোহিন দিনের মূল কাজ বীজ পূ্যা করা, রোহিন মাটি সংগ্রহ করা এবং গুরুর কাছে চিকিৎসা বিদ্যা গ্রহণের জন্য দীক্ষা গ্রহণ।

নেগাচার পালন;

(১) ভোরে বাসি মুখে বাড়ীর চারিপাশে গোবর লাতা দিয়ে পাঁচিলে বেড় আঁকা;

(২) গোবর জল দিয়ে আঙ্গিনা-উঠান নিকানো;

(৩) তুলসী তলায় আঁক দুয়ারে আলপনা দেওয়া;

(৪) জীব পুক্ষ্যা করা;

(৫) রোহিন মাটি ক্ষেত থেকে এনে ঘরের বিভিন্ন স্থানে এবং তুলসী মঞ্চে দেওয়া;

(৬) রোহিন ফল ভক্ষণ করা;

(৭) পিঠে তৈরী করে খাওয়া।

**লোক বিশ্বাস রোহিন দিনের মাটি অতীব পবিত্র ও বিষনাশক শক্তিসম্পন্ন। রোহিন দিনেই বিষাক্ত সর্পকূল ঘুম থেকে উঠে গর্ত থেকে বাইরে বার হয়ে আসে।

**রোহিন ফল খেলে বিষক্রিয়ার প্রতিষেধক হিসাবে কাজ করে।

**বীজপুহ্ন্যার সময় এবং রোহিন মাটি আনার সময় কোন লৌহার টুকরো সাথে রাখতে হয়। যাতে কোন কু-নজর না পড়ে।

**পুরুষ মানুষ বীজপুহ্যা এবং নারী রোহিন মাটি সংগ্রহের কাজ করেন।

**স্নান করে শুদ্ধ চিত্তে পবিত্র মনে বীজপুহ্যা এবং রোহিন মাটি আনার কাজ করতে হয়।

**কথা বলা কিম্বা হাসা কোন প্রকারেই চলবে না। মাটি আনার সময় এইরূপ ঘটনা ঘটলে মাথার মাটি ফেলে দিয়ে আবার স্নান করে মাটি নিতে হয়।

**আঁক দুয়ারের চৌকাঠে, তুলসী থানের মাথায়, ঘরের কোণায় কোণায় রোহিন মাটি রেখে দিতে হয়।
কুড়মালি নেগ-নীতি-নেগাচার

**ছেলের দল বানর-ভালুক সেজে বিচিত্র অঙ্গভঙ্গি করে রোহিন মাটি সংগ্রহকারিনী মহিলাদের হাসানোর চেষ্টা করে। সাবধান থাকতে হয়।

**বীজ পুহ্ন্যার জন্য কাঁসার বড় আকারের বাটী/ডুভা এবং রোহিন মাটি আনার জন্য নূতন বাঁশের ঝুড়ি কিম্বা টুকি নিতে হয়।
**বাটি/ডুভায় এবং টুকি/ঝুড়িতে তিনটি সিঁদুরের আঁক এঁকে নিতে হয়।
**রোহিনের স্থায়িত্ব সাত দিন। রোহিন রতরে বীজ ফেললে সেই বীজতলার ধানে কোন রোগ বা রোগ পোকা ধরে না। চারা সতেজ ও বেশী উৎপাদনশীল হয়ে থাকে।
**ঘরের পাঁচিলে আঁকা গোবরের বেড় পার হয়ে কোন বিষধর সাপ কিম্বা কীট-পতঙ্গ প্রবেশ করবে না।
**রোহিন দিনে গুরুর কাছে বিদ্যা শিক্ষা আরম্ভ করলে ভাল মত বিদ্যা শিক্ষা হবে এবং ভাল ফল পাওয়া যাবে।

**২০ জ্যৈষ্ঠর দিন প্রকৃতি মাঞের কাছে এক বেলা রোহিন বতর মাঁগন দিন। ঐ সময় পর্যন্ত ধান বীজ বীজতলায় ফেলা যায় (আফরগাড়াই)।
**রাত্রিতে জাঁত মঙ্গল ও মনসা মঙ্গল গাওয়া হয়।
(তথ্য সূত্র :-কুড়মালি নেগনিতি- নেগাচার)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *